মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয় 

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আজকের এই টিউটোরিয়ালে মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আপনি যদি না জেনে থাকেন যে মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয়  তাহলে এই টিউটোরিয়াল টি আপনার জন্য যার মাধ্যমে আপনি মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয় এবং মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে আররো কিছু তথ্য জানতে পারবেন। 

মজিবনগর পূর্বনাম বৈদ্যনাথতলা বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত তৎকালীন কুষ্টিয়ার এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠন করা হয়, এরপর তৎকালীন ভবের পাড়ায় বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালের সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশ  সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এই স্থানের নামকরণ মুজিবনগর করেছিলেন। তখন সরকারি নথির শীষে লেখা থাকতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ  সরকার মুজিবনগর। সরকারের ঠিকানা ছিল মুজিবনগর ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মুজিবনগর ছিল সরকারের রাজধানী। মুজিবনগর সরকারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। ২৫মার্চ এ ভয়াল কাল রাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদারদের নির্বিচারে গণহত্যা ও ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহার এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের কাছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল । স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সরকার গঠন হবে তা অকল্পনীয় ছিল পাকিস্তানিদের কাছে। কিন্তু দু'দণ্ড প্রতাপে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশ। গঠন করা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকার। এ অস্থায়ী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে পরিকল্পিত কায়দায় মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত ও সমন্বয় সাধন করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বাধীন বাংলাদেশকে পক্ষে আন্তর্জাতিক সাম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় করেছিল মুজিবনগর সরকার। 

মুজিবনগর সরকার গঠন প্রক্রিয়াটি খুব সহজ ছিল না ,স্বাধীনতার ঘোষণা মানেই হলো এদেশ আর পাকিস্তানের অংশ নয় বরং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম যার নাম বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ছিল এটি মুক্ত স্বাধীন দেশ নয়। বাংলাদেশের মাটি দখল করে আছে হানাদার বাহিনী নিবিচারে হত্যা করেছে মানুষকে। তাই বাংলাদেশকে হানাদার মুক্ত করতে একটি সরকার গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সেই অপরিহার্যতার বাস্তব রূপ হলো মুজিবনগর সরকার। এটি একটি বৈধ সরকার কারণ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছিল। 

যুদ্ধ করার কোন অভিপ্রায় আমাদের ছিল না কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যখন বুলেটের আঘাতে পুরো বাঙালি জাতিকে নির্মূল করার চেষ্টা চালায় তখন আমরা যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয়েছি আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য। তারপরেও সত্যকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ছিল মুজিবনগর সরকার। এ কথা ঠিক গত ৫০ বছরের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল ভিত্তি যা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার তার ছিটেফোঁটাও প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এ ব্যর্থতা কিংবা অনিচ্ছার দায় গত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশকে যারা শাসন করেছে তাদের। তাই বলে মুজিবনগর সরকারের গৌরব প্রয়োজনীয়তা কে অস্বীকার করা যাবে না। 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url