ঢাকা থেকে কলকাতা কত কিলোমিটার

কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী, ভারতের একটি প্রধান শহর। এটি হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এবং সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কলকাতা তার ঔপনিবেশিক স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এবং বিভিন্ন উৎসবের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এখানে রয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। কলকাতা শহরটি বিভিন্ন দিক থেকে উল্লেখযোগ্য, যেমন সাহিত্য, চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং সঙ্গীতের ক্ষেত্রে। কলকাতা ১৭শ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৭৩ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হয় এবং ১৯১১ সাল পর্যন্ত সেই অবস্থানে ছিল। এই সময়ের মধ্যে কলকাতা শহরটি ব্যাপকভাবে উন্নত হয় এবং এটি ভারতের অন্যতম প্রধান বন্দর শহর হয়ে ওঠে কলকাতা ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক, সঙ্গীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আবাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়, ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা এখানেই জন্মগ্রহণ করেছেন। কলকাতা আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব এবং বইমেলার জন্য বিখ্যাত।

কলকাতার স্থাপত্যে ঔপনিবেশিক যুগের প্রভাব স্পষ্ট। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ, ইডেন গার্ডেন্স, সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল প্রভৃতি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শনগুলি এখানে অবস্থিত। এছাড়া এখানকার রাস্তা, লেন, এবং বিল্ডিংগুলি ঔপনিবেশিক যুগের ঐতিহ্য বহন করে। কলকাতা ভারতের একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। শহরটির অর্থনীতির প্রধান খাতগুলি হলো শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, বাণিজ্য, এবং শিক্ষা। এখানে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক কর্পোরেট অফিস এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কলকাতার জনজীবন বিভিন্ন রঙে রঙিন। এখানকার লোকেরা তাদের উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য পরিচিত। দুর্গাপূজা কলকাতার প্রধান উৎসব, যা খুবই ধুমধামের সাথে উদযাপিত হয়। এছাড়া, অন্যান্য হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং শিখ ধর্মীয় উৎসবগুলিও পালিত হয়।

কলকাতায় ভ্রমণের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি বৈধ ভিসা। ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন এবং বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনে আবেদন করুন। এছাড়া, পাসপোর্ট এবং টিকিট সংগ্রহের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন। ভ্রমণের আগে বাংলাদেশি টাকাকে ভারতীয় রুপিতে বিনিময় করে নিন। সীমান্তে পাসপোর্ট এবং ভিসা চেকিংয়ের সময় সাবধান থাকুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন। ভ্রমণের আগে কলকাতার আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নিন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। কলকাতায় বাংলা এবং ইংরেজি প্রচলিত ভাষা, যা ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক।

কলকাতা মেট্রো ভারতের প্রথম মেট্রো রেল। এছাড়া, শহরটিতে ট্রাম, বাস, অটো এবং ট্যাক্সির মতো বিভিন্ন পরিবহন মাধ্যম রয়েছে। শহরটির প্রধান রেলওয়ে স্টেশন হাওড়া এবং শিয়ালদহ। নিকটবর্তী বিমানবন্দরটি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ঢাকা থেকে কলকাতা ভ্রমণ করতে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করা যায়: সড়কপথ, রেলপথ, এবং বিমানপথ। ঢাকা থেকে কলকাতা বাসে যাওয়া একটি জনপ্রিয় ও সুবিধাজনক উপায়। বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস কলকাতায় যাতায়াত করে, যেমন শ্যামলী পরিবহন, গ্রিনলাইন, এবং সোহাগ পরিবহন। বাসের যাত্রাপথ ঢাকা থেকে বেনাপোল (বাংলাদেশ) এবং পেট্রাপোল (ভারত) সীমান্ত দিয়ে চলে। সাধারণত বাসযাত্রা সময়সাপেক্ষ হয়, প্রায় ১০-১২ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে কলকাতা সরাসরি ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে চলাচল করে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ে এবং কলকাতার চিতপুর স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনযাত্রার সময় সাধারণত ১০-১১ ঘন্টা। ঢাকা থেকে কলকাতা সরাসরি ফ্লাইট একটি দ্রুত ও সুবিধাজনক উপায়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিভিন্ন এয়ারলাইনস সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাইটের সময় সাধারণত ১-১.৫ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে কলকাতা ভ্রমণের সড়কপথের দূরত্ব প্রায় ৩৪০ কিলোমিটার। প্রধানত দুটি রুট ব্যবহার করা হয় ঢাকা – যশোর – বেনাপোল – পেট্রাপোল – কলকাতা:** এই রুটটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। আর ঢাকা – মেহেরপুর – চুয়াডাঙ্গা – দর্শনা – গেদে – কলকাতা এই রুটটিও একটি বিকল্প, তবে তুলনামূলকভাবে কম ব্যবহৃত।

ঢাকা থেকে কলকাতার রেলপথের দূরত্ব প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার। মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে শুরু করে চিতপুর স্টেশনে পৌঁছায়, মাঝপথে বিভিন্ন স্টেশনে থামে। যাত্রার মোট সময় প্রায় ১০-১১ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে কলকাতার বিমানপথের সরাসরি দূরত্ব প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার। ফ্লাইটের সময় প্রায় ১-১.৫ ঘন্টা। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিভিন্ন এয়ারলাইনস সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

সড়কপথে প্রায় ৮-১২ ঘন্টা, সীমান্তে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস চেকিংয়ের উপর নির্ভর করে। রেলপথে প্রায় ১০-১১ ঘন্টা। বিমানপথে ফ্লাইটের সময় প্রায় ১-১.৫ ঘন্টা, তবে বিমানবন্দরে চেক-ইন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url