ভারতের রাষ্ট্রপতির নাম কি

ভারতের রাষ্ট্রপতি ভারতের সংবিধান অনুযায়ী দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। রাষ্ট্রপতির ভূমিকা মূলত সাংবিধানিক এবং তিনি সরকারের নির্বাহী কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংবিধানের বিভিন্ন ধারা দ্বারা নির্ধারিত হয়। তিনি সংসদে আইন প্রণয়ন, বাজেট অনুমোদন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারে না।

রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এবং অন্যান্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ, রাজ্যপালদের নিয়োগ এবং বিভিন্ন সরকারি কমিশনের প্রধানদের নিয়োগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও, তিনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং অপসারণের ক্ষমতা রাখেন। রাষ্ট্রপতি বিচারিক ক্ষমতার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি দণ্ডিতদের ক্ষমা, দণ্ড মওকুফ এবং সাজা কমানোর ক্ষমতা রাখেন। এছাড়া, তিনি সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারকদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রপতি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ এবং যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা রাখেন। তবে, এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলি সাধারণত প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পরামর্শে নেওয়া হয়।

ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন একটি বিশেষ নির্বাচনী কলেজ দ্বারা পরিচালিত হয়, যার মধ্যে সংসদের দুই কক্ষের (লোকসভা এবং রাজ্যসভা) নির্বাচিত সদস্য এবং সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত থাকে। নির্বাচন একটি গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রার্থীর বিজয়ের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রপতির কার্যকাল পাঁচ বছর। তিনি পুনরায় নির্বাচিত হতে পারেন, তবে কোনো ব্যক্তি কতবার রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন তার সীমা নেই। রাষ্ট্রপতি পদে শূন্যতা সৃষ্টি হলে উপ-রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যতক্ষণ না নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়।

ভারতের রাষ্ট্রপতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদ যা দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর একটি অপরিহার্য অংশ। রাষ্ট্রপতির নেতৃত্ব এবং দায়িত্ব পালন দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানের মূল্যবোধকে সুরক্ষিত রাখে। দ্রৌপদী মুর্মু তার বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ (প্রথম রাষ্ট্রপতি), ডঃ এপিজে আবদুল কালাম (একজন বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ), এবং প্রণব মুখার্জি।

বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দ্রৌপদী মুর্মু তিনি ভারতের ১৫তম এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি, যিনি ২০২২ সালের ২৫শে জুলাই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছেন। দ্রৌপদী মুর্মু ২০শে জুন, ১৯৫৮ সালে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ময়ূরভঞ্জ জেলার বায়ান্ধিপো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, যা একটি আদিবাসী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল গ্রামের স্কুল থেকে এবং পরবর্তীতে তিনি ভুবনেশ্বরের রামাদেব মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

দ্রৌপদী মুর্মু তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি ওড়িশার শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারে সহকারী অধ্যাপিকা হিসেবে কাজ করেছেন। তার পরবর্তী কর্মজীবন রাজনীতিতে চলে আসে। ১৯৯৭ সালে, তিনি প্রথমবারের মতো রায়রংপুর নগর পঞ্চায়েতের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন। মুর্মু ২০০০ সালে ওড়িশার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে রাজনীতির মূল ধারায় প্রবেশ করেন। তিনি ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ওড়িশার বাণিজ্য ও পরিবহন মন্ত্রী এবং পরে মাছ ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। তার রাজনৈতিক দক্ষতা ও সমাজসেবামূলক কাজের জন্য তিনি প্রশংসিত হন। 

দ্রৌপদী মুর্মু ২০১৫ সালে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হন এবং তিনি এই পদে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তার রাজ্যপাল হিসেবে সময়কালে, তিনি নানা সামাজিক ও শিক্ষামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা রাজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার (NDA) প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন। তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার নির্বাচনের ফলে ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আশা ও প্রেরণা জন্ম নেয়।

দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী অধিকার এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প ও উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন।দ্রৌপদী মুর্মুর জীবন ও কর্ম ভারতের জন্য একটি উদাহরণ। তিনি তার অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তার নেতৃত্বে ভারত একটি উন্নত, সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। তার জীবনের কাহিনী আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা দেয়। 

দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি বিশেষত আদিবাসী ও মহিলাদের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন সমাজের প্রত্যেকটি অংশের মানুষ সমান সুযোগ পাবে। মুর্মু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তাদের জন্য বিশেষ বৃত্তি ও শিক্ষা সহায়তা প্রকল্প চালু করেছেন। এছাড়াও, তিনি স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, বিশেষত গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

দ্রৌপদী মুর্মু পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং জনগণকে সচেতন করেছেন পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। তার নেতৃত্বে, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং পরিবেশ সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালু করা হয়েছে। নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে মুর্মু একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছেন। তিনি মহিলাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদানের জন্য বিভিন্ন নীতিমালা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এছাড়া, তিনি মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কাজ করছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং ভারতের পররাষ্ট্র নীতিকে সমর্থন করেছেন। তার নেতৃত্বে ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরো দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান স্থাপন করেছে। দ্রৌপদী মুর্মু তার ব্যক্তিগত জীবনেও একটি উদাহরণ। তিনি এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে দেশের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছেছেন। তার জীবনে নানা প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও তিনি কখনো থেমে থাকেননি। তার সততা, কঠোর পরিশ্রম, এবং জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ তাকে একজন মহান নেতা হিসেবে পরিচিত করেছে।

দ্রৌপদী মুর্মুর ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হল ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করা। তিনি বিশ্বাস করেন যে শিক্ষিত, সুস্থ, এবং সমৃদ্ধ সমাজই দেশের প্রকৃত উন্নয়নের চাবিকাঠি। তার ভবিষ্যৎ উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের কৃষি, শিল্প, এবং সেবা খাতকে এগিয়ে নেওয়া এবং একটি সবুজ ও পরিবেশবান্ধব ভারত গঠন। দ্রৌপদী মুর্মুর জীবন কাহিনী শুধু একজন আদিবাসী মহিলার সংগ্রামের কাহিনী নয়, এটি ভারতের গণতন্ত্রের শক্তি এবং সম্ভাবনারও একটি প্রমাণ। তার নেতৃত্বে, ভারত একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার কর্মময় জীবন ও অবদান আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে এবং একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের উদ্দীপিত করে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url