আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির রচয়িতা কে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষায় খ্যাতিমান গানের একটি বলে উল্লেখ করা হয়। বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করেছে, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির নাম একুশের গান, এই গানের কথায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সময় এই গানটি রচনা করা হয়। প্রথমে আবদুল লতিফ গানটি সুরারোপ করেন। পরে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই অধিক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৬৯ সালে জহির রায়হান তার জীবন থেকে নেওয়া চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করেন। বর্তমানে এই গানটি হিন্দি, মালয়, ইংরেজি, ফরাসি, সুইডিশ, জাপানিসহ ১২টি ভাষায় গাওয়া হয়।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো লিরিক্স
একুশের গান
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া-এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।
জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।
সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।
সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।
তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির রচয়িতা কে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির রচয়িতা হলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ ভাষা আন্দোলনকারী ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায় এতে সালাম, বরকত,রফিক, জব্বার সহ আরো অনেক ছাত্র হতাহত হয়। আবদুল গাফফার চৌধুরী ঢাকা মেডিকেলে যান আহত ছাত্রদের দেখতে। ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে তিনি ভাষা শহীদ রফিকের মাথার খুলি উড়ে যাওয়া লাশটি দেখতে পান। রফিকের লাশ দেখে তিনি মনে করেন এটা যেন তার নিজের ভাইয়েরই রক্তমাখা লাশ। তৎক্ষণাত তার মনে গানের প্রথম দুইটি লাইন আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি জেগে উঠে। পরে কয়েকদিনের মধ্যে ধীরে ধীরে তিনি পুরো গানটি লিখেন।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির সুরকার কে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির সুরকার আলতাফ মাহমুদ, তিনি একজন বাংলাদেশি সুরকার, সংস্কৃতিকর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি প্রথম গাওয়া হয়েছিলো ১৯৫৩ সালে। আবদুল গাফফার চৌধুরী এই গানটি লেখার পর হাসান হাফিজুর রহমান কে দেন এরপর হাসান হাফিজুর রহমান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে গানটি নিয়ে একুশে সংকলনে প্রকাশ করেন। এরপর তৎকালীন যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ এই গানটির সুরারোপ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া শুরু করেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৪ সালে সেসময়কার নামকরা সুরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটিতে পুনরায় সুরারোপ করেন। ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদের সুরে প্রভাত ফেরি'তে প্রথম গানটি গাওয়া হয়েছিলো।