অপারেশন সার্চলাইট কি | অপারেশন সার্চলাইট বলতে কি বুঝায়

কয়েকদিন আগে ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখলাম যেখানে একজন ইউটিউবার তার চ্যানেল কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য একটি কলেজে গিয়ে সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করছেন অপারেশন সার্চলাইট কি কেউ বলছেন কোনো এক টিভি অনুষ্ঠানের নাম অপারেশন সার্চলাইট। কেউ বলছেন একজন রোগীকে অপারেশন করার সময় উপরে যে লাইট গুলো জ্বালানো হয় সেগুলো হচ্ছে অপারেশন সার্চলাইট। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে অপারেশন সার্চলাইট কি কেউ এই বিষয়ের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। আসলে অপারেশন সার্চলাইট  কি যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই টিউটোরিয়াল আপনার জন্য এখানে আমি অপারেশন সার্চলাইট কি অপারেশন সার্চলাইট কাকে বলে? অপারেশন সার্চলাইট বলতে কি বুঝায় এই সকল বিষয়াবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 


অপারেশন সার্চলাইট কি

অপারেশন সার্চলাইট হচ্ছে ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ্‌ এর পরবর্তী অনুষঙ্গ। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত ১৯৭১সালে ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ধারা পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মাধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল। অপারেশন সার্চলাইটের আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেমের সাধারন মানুষ পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে, যা ছিলো পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীদের ধারণার বাইরে। অপারেশন সার্চলাইট নামের এই গণহত্যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতারিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পরিণতিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড মিত্র বাহিনির কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা পদ্ধতি

পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি লে জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসান পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর সামরিক হামলার বিরোধী ছিলেন তাই অপারেশনের পরিকল্পনার আগে তাদেরকে দায়িত্ব থের অব্যাহতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি এই অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েতা হতে ১৬তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এবং খরিয়ান থেকে ১৯তম ডিভিশনকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আদেশ দেয়া হয়। অপারেশনের সিদ্ধান্ত ও সাফল্যের শর্ত সীমা তৈরি করেন জেনারেল ফরমান আর  জেনারেল খাদিম সেনাদলের স্থান বিতরন, বিভিন্ন ব্রিগেড ও ইউনিটের উপর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন ইত্যাদি কাজ তদারকি করেন। অপারেশন শুরু হয় ২৫ মার্চ রাতের শেষ প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার মাধ্যমে। তারপর অন্যান্য গ্যারিসনকে ফোন কলের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়। করে দেয়া হয়। ঢাকার সৈন্যদের কমান্ডে ছিলেন রাও ফরমান আলি এবং অন্যান্য সব স্থানের সৈন্যদের কমান্ডে ছিলেন জেনারেল খাদেম।

অপারেশন সার্চলাইট মূল লক্ষ্যে

পাকিস্তানের পরিকল্পনা অনুযায়ী অপারেশন সার্চলাইটেন মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মীদের নিশ্চিহ্ন ও বঙ্গবন্ধু সহ সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতা, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ এবং শিক্ষকদের গ্রেফতার করতে হবে। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে একযোগে একসাথে অপারেশনের কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং ঢাকায় অপারেশন ১০০% সফল হওয়া বাধ্যতামূলক। করার লক্ষ্যে রাত ১১টায় কারফিউ জারি করা এবং টেলিফোন/টেলিগ্রাফ/রেডিও স্টেশন এবং সকল প্রকার পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ করে দির হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে সেনানিবাসকে সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনে উন্মুক্ত ও সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অস্ত্র ব্যবহারের কর্তৃত্ব প্রদান করে ঢাকা শহরের সড়ক, রেল ও নৌ-পথের দখল নিয়ে সারা শহর বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং নদীতে টহল জারি করা। ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের অস্ত্র কারখানা এবং রাজেন্দ্রপুরের অস্ত্রগুদাম দখল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইপিআর সদর দফতর, এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন ধ্বংস ও পরাভূত করা এবং ২য় ও ১০ম ইবিআর কে নীরস্ত্র করা। ধানমন্ডি এলাকায় এবং হিন্দু এলাকা গুলোতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্চ করে সকল পূর্বপাকিস্তানি তথা বাঙালি সৈন্যদলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেড়ে নিয়ে নিস্ক্রিয় করে দিতে হবে।

প্রিয় পাঠক এই ছিলো অপারেশন সার্চলাইট কি এই সম্পর্কে আমাদের আলোচনা। আপনি যদি পুরো টিউটোরিয়াল টি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি এই টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে নতুন কিছু শিখেছেন এবং জেনেছেন। তবে এখানেই শেষ নয়! পরবর্তীতে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী এই টিউটোরিয়ালে আরো কিছু তথ্য যুক্ত করে আপডেট করে দিবো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url