মুসলিম দর্শন ও ইসলামি দর্শন এর মধ্যে পার্থক্য কি

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আজকের এই টিউটোরিয়ালে মুসলিম দর্শন ও ইসলামি দর্শন এর মধ্যে পার্থক্য কি এই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে। আপনি যদি না জেনে থাকেন মুসলিম দর্শন ও ইসলামি দর্শন এর মধ্যে পার্থক্য কি তাহলে এই টিউটোরিয়াল টি আপনার জন্য। যা থেকে আপনি জানতে পারবেন মুসলিম দর্শন ও ইসলামি দর্শন এর মধ্যে পার্থক্য কি চলুন জেনে নেয়া যাক মুসলিম দর্শন ও ইসলামি দর্শন এর মধ্যে পার্থক্য কি।

আমাদের বিশ্ব, সাধারন প্রশ্ন উত্তর, নতুন বিশ্ব, অজানা তথ্য, আজকের বিশ্ব, সাধারন জ্ঞান, জেনারেল নলেজ, কুইজ, ধাঁধা, এমসিকিউ, আইকিউ, বিসিএস প্রিলিমিনারি,

মুসলিম দর্শন ও ইসলামি দর্শন এর মধ্যে পার্থক্য কি

মুসলিম দর্শন মুসলিম চিন্তাবিদদের যে কোন দার্শনিক আলোচনা। হোক সে গ্রীক দর্শনাভিত্তিক, কুরআন ও হাদিস ভিত্তিক। কিন্তু ইসলামী দর্শন হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে কুরআন ও হাদিস ভিত্তিক। মুসলিম দর্শনে আলোচনা পরিচালিত ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা ও নিজস্ব প্রজ্ঞার দ্বারা। কিন্তু ইসলামী দর্শন ব্যক্তিগত বিশ্বাস , ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিগত প্রজ্ঞা নির্ভর নয় , এটি সম্পূর্ণভাবে কুরআন ও হাদিস নির্ভর । মুসলিম দর্শনের পরিসর  বা ব্যাপ্তি ইসলামী দর্শন থেকে ব্যাপকতর। কিন্তু ইসলামী দর্শনের পরিসর  মুসলিম দর্শন থেকে সংকীর্ণতর । মুসলিম দর্শন হচ্ছে মুসলিম চিন্তাবিদদের যে কোন দার্শনিক আলোচনা। কিন্তু ইসলামী দর্শন বলতে তারা এমন দার্শনিক আলোচনাকে বুঝিয়েছেন যা কেবল ধর্ম তত্ত্বের আলোকে আলোচিত । মুসলিম দর্শন সকল অন্ধ বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে মুক্ত মনে ও এত চিন্তা মুক্ত চিন্তায় সকল আপ্ত বাক্যকে স্বাধীন ও সনিয়ন্ত্রিত করার মাধ্যমে বিচার বিশ্লেষণ করে এগুলো যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে থাকে । কিন্তু ইসলামী দর্শন ধর্মীয় আপ্তবাক্য সমূহ কে বিনা বিচারে গ্রহণ ও বিশ্বাস করে । মুসলিম দর্শনে প্রাধান্য  দেয়া হয় বিচারবুদ্ধি ও যুক্তিতর্ককে , কিন্তু ইসলামী দর্শনে প্রাধান্য দেওয়া হয় অতীন্দ্রিয়বাদকে।

মুসলিম দর্শন

মুসলিম দর্শন বেশ কিছু উৎস থেকে উৎপত্তি  ঘটলেও প্রধান  উৎপত্তিস্থল হলো কোরআন ও হাদিস । পবিত্র কোরআন অবতরণ শুরু হয় জ্ঞান অর্জনের নির্দেশনা দিয়ে । বিশ্ব মানবকে মহান আল্লাহ প্রথমেই আদেশ দেন পড়, তোমার প্রভুর নামে , যিনি সৃষ্টি করেছেন । পরে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয় , তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন রাত , দিন , সূর্য ও চাঁদকে। আর নক্ষত্রগুলোও তো তারই নির্দেশে নিয়োজিত। নিশ্চয় এসবের মধ্যে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলি। প্রকৃত মোমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে কোরআনে বলা হয় , তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিশৈলী সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করে এবং বলে , আমাদের প্রভু! এসব অনর্থক সৃষ্টি করোনি।

বিশ্বমানবের জন্য কোরআনে পূর্ণাঙ্গ জীবন নির্দেশনা রয়েছে । আল্লাহ বলেছেন , এই গ্রন্থে আমি কোনো কিছুর বর্ণনা বাকি রাখিনি। মহাগ্রন্থ আল কোরআন মানুষকে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি , বিশ্বজাহান সৃষ্টি, ঋতুর পরিবর্তন, দিন-রাতের আবর্তন, সাগর, মহাসাগর, নদীর প্রবাহ , মেঘ ,বাতাস ,বৃষ্টির গতিশীলতা , মহাশূন্যে সূর্য , চন্দ্র ও অসংখ্য নক্ষত্রের পরিভ্রমণ, জন্ম মৃত্যুর রহস্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা এবং গবেষণার আদেশ দেয়। স্বয়ং  আল্লাহ কোরআনকে অবহিত করেন বিজ্ঞানময় মহাগ্রন্থ নামে । বস্তুত কোরআনের উৎসাহব্যঞ্জক ও নির্দেশক আয়াতগুলোর ভিত্তিতে মুসলিম চিন্তাবিদরা সৃষ্টির রহস্য নিয়ে গভীরতম গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন  ফলে মুসলিমদের চিন্তা জগতে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আর এখান থেকেই মুসলিম দর্শনের মূল উৎপত্তি।

ইসলামি দর্শন

ইসলামি সমাজে ইসলামি  দর্শন প্রবর্তন করা ও সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করার নামই হলো ইসলামি দর্শন। ইসলামি দর্শন অথবা আরবি দর্শন হল জীবন বিশ্বজগৎ নৈতিকতা সমাজ ও মুসলিম বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত  আরও অনেক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সমস্যার উপরে নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা , অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা। ইসলামি দর্শন মূলত দুই ভাগে বিভক্ত  কালাম ও ফালসাফা । ফালসাফা গ্রিক শব্দ , এটি গ্রিক দর্শন থেকে উৎসরিত। অপরদিকে কালাম অর্থ কথা বা বক্তব্য , এটি যুক্তিতর্ককে দর্শনে ব্যবহার করে। ইসলামি দর্শন একটি জেনেরিক শব্দ যাকে বিভিন্ন উপায়ে সংজ্ঞায়িত এবং ব্যবহার করা যায়। বিস্তৃত অর্থে এটি ইসলামের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি যা ইসলামিক গ্রন্থে থেকে উদ্ভূত হয়েছে যা মূলত মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য এবং সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছা সম্পর্কে আলোকপাত করে । অন্য অর্থে এটি ইসলামি সাম্রাজ্যের অধীনে বা আরব ইসলামি সংস্কৃতি এবং ইসলামি সভ্যতার ছায়াগ্রন্থের মধ্যে যেসব চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছে এমন কোনও স্কুলকে বোঝায় । সংকীর্ণ অর্থে এটি ফালসাফার একটি অনুবাদ , অর্থ এই বিশেষ স্কুলগুলির মতামত যে অধিকাংশ  নিওপ্লাটোনিজম ও এরিস্টটলীয়লিজমের মত গ্রিক দর্শনের পদ্ধতির প্রভাবকে প্রতিফলিত করে।




 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url