অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য কি

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আজকের এই টিউটোরিয়ালে অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য কি এই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে। আপনি যদি না জেনে থাকেন অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য কি তাহলে এই টিউটোরিয়াল টি আপনার জন্য। যা থেকে আপনি জানতে পারবেন অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য কি চলুন জেনে নেয়া যাক অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য কি।


অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য কি

বিচ্যুতি বলতে সমাজের রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ ভঙ্গ করাকে বোঝায়। অন্যদিকে আইন ভঙ্গমূলক কাজকে অপরাধ বলে। রাষ্ট্র বা আইন কর্তৃক অননুমোদিত কাজ হলো অপরাধ। অন্যদিকে, সাধারণ অর্থে মানুষের যেসব আচরণ সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী, সমাজে অসংগতি এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাকে বিচ্যুত আচরণ বলে। আইন ভঙ্গমূলক কাজ হলো অপরাধ, অন্যদিকে বিচ্যুতি হলো সমাজে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ। বিচ্যুতি ও অপরাধ ঘনিষ্ঠ হলেও এরা এক নয়, প্রকৃতপক্ষে বিচ্যুতির ধারণা অপরাধের চেয়েও বড়। অপরাধ হলো শুধু আইনের লঙ্ঘন। অপরাধের শাস্তি রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত। সে শাস্তি হতে পারে লঘু অথবা গুরু; অন্যদিকে, বিচ্যুতি হচ্ছে সেই আচরণ, যা আইন লঙ্ঘন করে না, তবে বিচ্যুতিমূলক আচরণকে সমাজের বেশির ভাগ মানুষ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকে। এর মাধ্যমে সামাজিক সংহতি কিছুটা হলেও বিনষ্ট হয়।

বিচ্যুত আচরণের জন্য অনেক সময় তিরস্কারসহ সামাজিক শাস্তি প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, অপরাধের জন্য সামাজিক শাস্তি নয়, আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের ভ‚মিকা অধিকতর কার্যকর। তবে সামাজিক আন্দোলন এবং সচেতনতাও প্রয়োজন। অন্যদিকে, বিচ্যুত আচরণ নিয়ন্ত্রণে পরিবার এবং সমাজের ভূমিকাই যথেষ্ট। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সব সমাজ ও সংস্কৃতিতে অপরাধের ক্ষেত্রে তেমন পার্থক্য থাকে না। হত্যা, ধর্ষণ, চুরি সর্বত্রই অপরাধ হিসেবে গণ্য। তবে দেশভেদে শাস্তির পার্থক্য রয়েছে। একই অপরাধে কোনো দেশ অপরাধীর মৃত্যুদন্ড দিতে পারে আবার কোনো কোনো দেশ নির্দিষ্ট মেয়াদে মৃত্যুদন্ড দিতে পারে।

অপরাধ লিখিত, কোনটি অপরাধ এবং তার জন্য শাস্তি কী হবে তা লিখিতভাবে জারি করা হয়। অন্যদিকে, বিচ্যুতি প্রায়শ অলিখিত এবং যুগ যুগ ধরে প্রচলিত।

অপরাধ

অপরাধ বা কসুর হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক আইনবিরুদ্ধ কাজ। দেশ বা অঞ্চলের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রণীত আইনের পরিপন্থী কার্যকলাপই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধ গুরুতর কিংবা লঘু উভয় ধরনেরই হতে পারে। অপরাধের ফলে ব্যক্তিকে অর্থদণ্ড, হাজতবাস বা কারাগারে প্রেরণসহ উভয় দণ্ড কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণদণ্ডও প্রদান করা হয়ে থাকে। যে বা যিনি অপরাধ করেন বা অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন, তিনি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে থানাসহ পুলিশ, গোয়েন্দা রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী আদালতের মহামান্য বিচারক অপরাধীকে প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়ে থাকেন।সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি, অন্য কোন ব্যক্তি বা সমাজের সমস্যা সৃষ্টিকল্পে যে সকল কাজ করেন তাই অপরাধ। অপরাধ হিসেবে কোন ব্যক্তিকে খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধর্ষণ, জালিয়াতি, অর্থপাচার ইত্যাদি রয়েছে যা পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই স্বীকৃত থাকায় দণ্ডনীয়। এছাড়াও, মদ্যপান, কোকেন, হেরোইন, গাজা সেবন, নিষিদ্ধ প্রাণীর মাংস খাওয়াসহ সমাজের বিরুদ্ধ কার্যাবলী সম্পাদন করা অপরাধের আওতাভূক্ত।

বিচ্যুতি

সাধারণ অর্থে মানুষের যেসব আচরণ সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী, সমাজে অসংগতি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাকে বিচ্যুত আচরণ বলে। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিচ্যুত আচরণকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়াস পেয়েছেন। যেমন সমাজবিজ্ঞানী যে. ড. রস  বলেছেন, বিচ্যুত আচরণ হচ্ছে ঐ সব আচরণ যেগুলো সামাজিক প্রত্যাশাকে নিশ্চিত করতে পারে না। বি ভূষণ তার গ্রন্থে বলেছেন, বিচ্যুতি প্রত্যয়টি ব্যবহৃত হয় এমন আচরণ বুঝাতে যা বিধিনিষেধ বা অন্যের প্রত্যাশাকে লঙ্ঘন করে। এটি অননুমোদিত এবং শাস্তি বিধানের ব্যাপারে আগ্রহী।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url