নাউজুবিল্লাহ অর্থ কি

প্রিয় পাঠক আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মুসলমানরাই নাউজুবিল্লাহ অর্থ কি এটা জানি না। যদিও আমরা কথায় ও কাজে অনেকেই এই নাউজুবিল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। বিশেষ করে আমরা যখন কোনো খারাপ কিংবা মন্দ কাজ দেখি বা আমাদের চোখের সামনে যখন কোনো খারাপ মন্দ বা অশ্লীল অশোভনীয় কিছু ঘটে, তখন অনেকে বলে থাকেন, ‘নাউজুবিল্লাহ-نَعُوْذُ بِاللهِ কিংবা ‘নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক-نَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ ذَالِكْ’

কিন্তু কেন মানুষ নাউজুবিল্লা পড়ে বা নাউজুবিল্লাহর অর্থই বা কী? আর এটি কখন পড়তে হয়? এটাও আমরা অনেকেই জানি না।  কিন্তু এটা কোনো সাধারণ কথা বা উক্তি নয়। এটি একটি দোয়া বিশেষ। যা খুবই শক্তিশালী এবং আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। কিন্তু আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমরা অনেকেই এই দোয়া এবং এই ফজিলতপূর্ণ আমল থেকে বেমালুম দূরে আছি। তাহলে চলুন আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানার চেষ্টা করি নাউজুবিল্লাহ অর্থ কি, এটি কখন পড়তে হয় এবং এর গুরুত্ব ও ফজিলত কতটুকু। 

নাউজুবিল্লাহর অর্থ কি

নাউজুবিল্লাহ বা نَعُوْذُ بِاللهِ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আমি আল্লাহ থেকে পানাহ চাই বা আশ্রয় চাই। অর্থাৎ যেকোনো সময় যাবতীয় খারাপ, মন্দ বা অশ্লীল কাজ দেখলে বা পতিত হলে একজন মুমিন সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে ঐ মন্দ বা খারাপ কাজ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে এই নাউজুবিল্লাহ বলার মাধ্যমে। সুতরাং এর অর্থ হলো আমি আল্লাহর কাছে যাবতীয় মন্দ, অশ্লীল বা খারাপ কাজ থেকে পানাহ বা আশ্রয় চাই।

নাউজুবিল্লাহর গুরুত্ব

আমরা যদিও বিভিন্ন সময় নাউজুবিল্লাহ কিংবা ‘নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক’ এই কথা বলে থাকি। কিন্তু আমরা জানি না কেন এটা পড়তে হয়, কখন পড়তে হয় কীভাবে পড়তে হয়। আবার কেউ এটি পড়ার কারণ জানলেও না বুঝেই তা পড়ে থাকেন। ‘নাউজুবিল্লাহ’র অর্থ ও পড়ার কারণ জানা খুবই জরুরি। তবেই মানুষ গুরুত্বসহকারে এর উপর আমল করবে।

এই নাউজুবিল্লাহ কথাটি আসলেই এক‌টি দোয়া। আর এটি এমন একটি গুণান্বিত দোয়া, যা যেকোনো মুমিনকে অন্যায়মূলক কাজ থেকে হেফাজত করে। কেননা এ দোয়ার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর কাছে অন্যায়-অপরাধ, মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চায়। তাই যখনই কোনো মুমিন কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে তখনই যখন এই দোয়া পড়া হয়, তখনই সে আল্লাহর ইচ্ছায় মন্দ থেকে হেফাজত হয়ে যায়। এতে করে এই দোয়া পড়ার কারণে মুমিনের জীবন অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। এ জন্য নাউজুবিল্লাহ-এর অর্থ জেনে নেওয়া প্রয়োজন। এটি পড়ার কারণও জেনে নেওয়া প্রয়োজন। কেননা ইসলামে এর গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। 

নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক

নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক এই দোয়ার অর্থ হলো- এই মন্দ খারাপ অশ্লীল অন্যায় ইত্যাদি যাবতীয় কাজ থেকে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।আমরা যদি শাব্দিক অর্থ বিবেচনা করি, তাহলে- نَعُوْذُ (নাউজু) এর অর্থ হলো, আমি আশ্রয় চাই, পরিহার করতে চাই, পানাহ চাই, বিরত ইত্যাদি থাকতে চাই। بِاللهِ (বিল্লাহ) অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর কাছে। مِنْ ذَالِكْ (মিন জালিক) অর্থাৎ মিন অর্থ থেকে, জালিকা মানে (খারাপ-মন্দ-অন্যায়-অপরাধ ইত্যাদি) থেকে। সুতরাং আমরা যদি এর সুন্দর অর্থ দাঁড় করায় তাহলে হবে, আমি এই (অন্যায়-অপরাধ-মন্দ ও খারাপ ইত্যাদি) কাজ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই কিংবা আশ্রয় চাই। আর এই চাওয়ার মাধ্যমে একজন মুমিন তার তাকওয়ার পরিচয় দিবে। একইসাথে তার দৃঢ় দীপ্ত ঈমানের বহিঃপ্রকাশ করবে। 

নাউজুবিল্লাহ কখন পড়বেন

আল্লাহ্ আমাদের সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। তাই প্রতিনিয়তই শয়তান আমাদের পিছনে পড়ে আছে নানান ভাবে গুনাহ করিয়ে পাপী বানাবার জন্য। তাই যখনই একজন মুমিন যেকোনো ধরনের খারাপ, অশ্লীল, মন্দ বা ইসলাম (দ্বীন) বিরোধী কোনো কিছু দেখলে, শুনলে, অথবা নিজেরই ভুলবশত কোনো কাজ নিজে করলে বা করতে শুরু করলে, সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে এই পাপ থেকে নিজেকে বিরত রাখার কিংবা আল্লাহ নিজেই (কোনো না কোনো উপায়ে) এই পাপ থেকে তার বান্দাকে মুক্ত রাখার জন্য পানাহ, মুক্তি বা আশ্রয় চাওয়ার জন্য এই দোয়া ‘নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক’ পড়তে হয়।

আর আমরা যেহেতু প্রতিনিয়তই নানান পাপের সম্মুখীন হচ্ছি, তাই আমরা যখন এটি পড়ার কারণ এবং এটির অর্থ জানব, তখন আমাদের মনও এই পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। এর অর্থ জানা থাকলে এ দোয়াটি একজন মুমিন হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করবে। আর মুমিনের এই উপলব্ধি থেকেই সে নিজেকে  অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ এবং শিক্ষা হচ্ছে,  যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। কেননা তিনি নিজেই সর্বদা আল্লাহর কাছে অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাইতেন।

সহিহ বুখারি ও মুসলিম হাদীস গ্রন্থে একটি হাদিসের বর্ণনায় তা এভাবে এসেছে- আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন অদৃষ্টের  অনিষ্ট   থেকে , দুঃখ পাওয়া  থেকে , শত্রুদের আনন্দ  থেকে  এবং বালা-মুসীবাতের কষ্ট  থেকে, অতএব প্রত্যেক মুসলমানদের এটা দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, যেকোনো অন্যায়, অশ্লীল, পাপাচার ইত্যাদি দেখলে বা নিজে করলে সাথে সাথেই আল্লাহর কথা স্বরণ করে  নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য ও ক্ষমা চাওয়া।

যাতে করে আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে এই পাপ থেকে আমাদের দূরে রাখেন। একইসাথে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্বরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সর্বদা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দান করুন আমিন। 

আমরা এতক্ষণ নাউজুবিল্লাহ অর্থ কি এবং এর গুরুত্ব ও ফজিলত, একইসাথে নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক এর অর্থ এবং তা কখন ও কেন পড়তে হয় তা জানলাম। আশাকরি দ্বীন ইসলামের এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে সঠিক ইসলাম পালন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url