বৃষ্টিপাত কি | বৃষ্টিপাত কাকে বলে

বৃষ্টিপাত কি বৃষ্টিপাত কত প্রকার এই বিষয়ে যদি আপনার কোনো ধারনা না থাকে তাহলে এই টিউটোরিয়াল টি আপনার জন্য। আমরা আজকে এই টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে বৃষ্টিপাত কত প্রকার ও কি কি  সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা  হবে। আপনি যদি পুরো টিউটোরিয়াল টি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে বৃষ্টিপাত কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। চলুন শুরু করা যাক।

বৃষ্টিপাত বলতে কি বুঝায়

বৃষ্টিপাত বলতে কি বুঝায় জানতে হলে আগে আপনাকে বৃষ্টিপাত কেন হয়,আকাশ থেকে কিভাবে বৃষ্টি ঝরে পড়ে।প্রধানত বৃষ্টি হওয়ার জন্য প্রয়োজন জলীয়বাষ্প,এই জলীয়বাষ্প হালকা হওয়ার কারণে এটি উপরের দিকে উঠে যায়। তার ফলে বাতাসের সাহায্যে ধূলকণা বা বালির কণা জমতে শুরু করে, তার ফলে সেই ধূলকণা বা বালির কণা মেঘে রূপান্তরিত হয়।মেঘে রূপান্তরিত হওয়ার পরে মেঘ গুলো বড় আকারে জমতে জমতে যখন ভারি হয়ে যা  তখন বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি হচ্ছে এক ধরনের তরল বর্ষণ,যা বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প থেকে ঘনীভূত হয়ে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের দিকে পড়ে। মেঘ ঘনীভূত হয়ে পানি বিন্দুতে পরিণত হয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে এবং তখন বৃষ্টিপাত হয়। 

বৃষ্টিপাত কত প্রকার ও কি কি

বৃষ্টিপাত কত প্রকার ও কি কি, বৃষ্টিপাত প্রধানত চার প্রকার। সেগুলো হলে পরিচলন বৃষ্টিপাত, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত ও সংঘর্ষ বৃষ্টিপাত। মেঘ ভারি হয়ে পানিতে রূপান্তরিত হয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ফেলে তা পৃথিবীতে নেমে আসে, তখন বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের চারটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমরা আজকে আপনাদেরকে জানাবো। 

পরিচলন বৃষ্টিপাত কিভাবে হয়

বিকেল ও সন্ধ্যার বেলায় সূর্য এর কিরণে জল বাষ্পে পরিণত হয়ে সরাসরি উপরে উঠে যায় এবং শীতল বায়ুর সংস্পর্শ হয়ে জলীয়বাষ্প প্রথমে মেঘ সৃষ্টি হয়।তার পরে সেটি বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হয়ে সরাসরি নিচে নেমে আসে।তার পরে সেটি পরিচলন বৃষ্টিপাত রূপান্তরিত হয়। একে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে। পরিচলন বৃষ্টিপাত প্রধানত দুইটি কারনে এখানকার বায়ুমণ্ডলে সবসময় জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। তাহলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থলভাগের চেয়েও জলভাগের বিস্তৃতি বেশি এবং এখানে সূর্যকিরণ সবসময় লম্বভাবে পড়ে। বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প হাল্কা হওয়ার কারণে তা সহজেই উপর দিকে উঠে শীতল বায়ুর সংস্পর্শ হয়ে তা পরিচলন বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হয়    পরিচলন বৃষ্টিপাত শুরু হয়।তাই নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারা বছর প্রতিদিনই বিকেল অথবা সন্ধ্যার সময় পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়।

শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কিভাবে হয় 

শৈল শব্দের অর্থ হলো পর্বত বা উৎক্ষেপ, এর অর্থ হলো উপরে ওঠা। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতে বাধা পেয়ে ওপরে ওঠে, ফলে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে করে  ঘনীভূত পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে। শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত পর্বত বা উৎক্ষেপ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। তাই একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলা হয়ে থাকে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পাহাড় বা পর্বত প্রতিবাত ঢালে বাধা পেয়ে উপরের দিকে উঠে ঘনীভূত হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। সমুদ্রের কাছাকাছি  উঁচু পাহাড় বা পর্বত থাকলে, প্রবল বেগে প্রবাহিত জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্রবায়ু উঁচু পাহাড় বা পর্বত  দ্বারা সমকোণে বাধা পেলে পর্বতের উপরিভাগ বরফাচ্ছন্ন থাকলে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বেশি হয় থাকে। 

ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত কিভাবে হয়

ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত কিভাবে হয়,তা জানতে হলে আগে আপনাকে জানতে হবে ঘূর্ণবাত বলতে কি বুঝায়। ঘূর্ণবাত প্রাকৃতিক জন্য খুবই বিপদজন। ঘূর্ণবাত ফলে পৃথিবীর জীব জগত বা বিপুল সম্পদ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। সাধারণত ঘূর্ণবাতের ফলে জলীয়বাষ্প পূর্ণ  বায়ু উপরে উঠে সেগুলো জমতে জমতে ভারি হয়ে যায়। যার কারণে বৃষ্টিপাত শুরু হয়, তাই তাকে ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত বলে। ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত প্রধানত দুইটি কারনে হয়ে থাকে। তাহলে ক্রান্তীয় ঘুর্ণবৃষ্টি ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবৃষ্টি। ক্রান্তীয় ঘুর্ণবৃষ্টি কিভাবে হয় ও নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিপাত কিভাবে হয় সেই সম্পর্কে নিচে বর্ণনা দেওয়া হল।

ক্রান্তীয় ঘুর্ণবৃষ্টি কিভাবে হয়

ক্রান্তীয় ঘুর্ণবৃষ্টি কিভাবে হয়,তা জানতে হলে আগে আপনাকে জানতে হবে ক্রান্তীয় ঘুর্ণবৃষ্টি কি। ক্রান্তীয় ঘুর্ণবৃষ্টি হলে এক ধরনের শক্তিশালী ঘূর্ণমান ঝড়। ক্রান্তীয় ঘুর্ণ বৃষ্টিপাতে রয়েছে একটি নিম্নচাপ কেন্দ্র। যা    নিকটবর্তী নিম্ন-স্তরের খুবই তাড়াতাড়ি প্রদক্ষিণরত বায়ু ঝড়ো বাতাস সর্পিল বিন্যাসের বজ্রঝড় যায়। তার  ফলে সেই সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। ক্রান্তীয় ঘুর্ণবৃষ্টিকে আর বেশ কিছু নামের বলা থাকে। তাহলে  গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়, টাইফুন, সাইক্লোন, সাইক্লোনিক ঝড় ইত্যাদি। ক্রান্তীয় ঘুর্ণবৃষ্টি ক্রান্তীয় অঞ্চলে সমুদ্র থেকে তৈরি হয় গভীর নিম্নচাপ। আর এই গভীর নিম্নচাপ থেকে বিশিষ্ট প্রবলে বিধ্বংসী ঘূর্ণবাতকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে।ক্রান্তীয় অঞ্চলে শরৎকালে ও গ্রীষ্মকালে  সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ু হঠাৎ করে ঠান্ডা হয়ে গেলে তা হালকা হয়ে উপরে দিকে উঠে যায়। যার কারণে বায়ু গুলো গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সংযুক্ত শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নচাপ কক্ষের আকর্ষনে কুন্ডলীর মতো ঘুরতে ঘুরতে   নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয় এবং পর্যায়ক্রমে ঠান্ডা ও উপর দিকে উঠে যায়। যার কারণে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি করে।

নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবৃষ্টি কিভাবে হয় 

নাতিশীতোষ্ণ গোলাকার কোন স্থানে যদি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তাহলে মেরু অঞ্চল থেকে শীতল শুষ্ক বায়ু এবং ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পে ওই নিম্নচাপ এর দিকে ছুটে আসে।যার কারণে দুই বায়ু পরস্পরের মুখোমুখি হলে তাদের মধ্যে বিণ সৃষ্টি হয়। তখন উষ্ণ বায়ু হালকা হওয়ায় ঘনীভূত শীতল বায়ুর উপর দিকে  ধীরে ধীরে উঠে যায়,এবং উষ্ণ বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প শীতল ও ভারি হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় । এই বৃষ্টিকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণ বৃষ্টি বলে। 

সংঘর্ষ বৃষ্টিপাত কিভাবে হয় 

শীতল ও উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ যখন মুখোমুখি হয় তখন শীতল বায়ুর সংস্পর্শে উষ্ণ বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শিশিরাকে পোঁছায়। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ আরও ভারি হয়ে বায়ুপুঞ্জের সংযোগস্থলে বৃষ্টিপাত সৃষ্টি হয়।এই ধরনের বৃষ্টিপাত নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত।তাই এ ধরনের বৃষ্টিপাত শুধুমাত্র নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে  দেখা যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url