জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আজকের এই টিউটোরিয়ালে জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আপনি যদি জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে এটা জানতে চান তাহলে এই টিউটোরিয়াল টি  আপনার জন্য যার মাধ্যমে আপনি জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে, জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর স্তম্ভ কয়টি, জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফলক কয়টি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত, জাতীয় স্মৃতিসৌধের উচ্চতা কত ফুট,জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করে এই সকল্ম বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন ।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে

জাতীয় স্মৃতিসৌধ হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত স্মারক স্থাপনা জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। মুক্তিযুদ্ধের ১ বছর পর ১৯৭২ সালে ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম স্মৃতিসৌধের শিলান্যাস করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে নকশা আহবান করেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য মোট ৫৭ টি নকশা প্রণীত হয় যেখান থেকে সৈয়দ মাইনুল হোসেনের প্রণীত নকশাটি গ্রহন করা হয়। এবং ১৯৭৯ সালে স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ও ১৯৮২ সালে শেষ হয়।

স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনের জন্ম ৫ মে ১৯৫২ ঢাকা বিক্ৰমপুরে এবং মৃত্যু ১০ নভেম্বর, ২০১৪ বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই স্থপতি জাতীয় স্মৃতিসৌধ জাতীয় জাদুঘর, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন, চট্টগ্রাম ইপিজেড এর অফিস ভবন, শিল্পকলা একাডেমীর বারো'শ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, উত্তরা মডেল টাউন সহ আরো বেশ কিছু স্থাপনা করেছেন। স্থাপত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৮ সালে একুশে পদক এবং ২০২২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর স্তম্ভ কয়টি

জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্তম্ভগুলির মধ্যে প্রতিটি স্তম্ভের উপরে বিভিন্ন বিপ্লবী শহীদদের নাম এবং মৃত্যুবার্ষিকী লেখা আছে। এই স্তম্ভগুলি শহীদদের মর্যাদায় সম্মান প্রদানের জন্য নির্মিত হয়েছে এবং তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। এই স্তম্ভগুলির মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যুদ্ধ ও তার শহীদদের অনুগত জনগণ তাদের স্মরণ করে ও তাদের সম্মান প্রদান করে। এই স্তম্ভগুলি রাষ্ট্রীয় স্মৃতি স্থলের প্রধান আকর্ষণ হিসাবে পরিচিত।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে মোট স্তম্ভ সংখ্যা প্রায় ৫০ টি। এই স্তম্ভগুলি প্রতিটি বিপ্লবী শহীদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি স্তম্ভের উপরে তার নাম ও মৃত্যুবার্ষিকী লেখা আছে। এই স্তম্ভগুলি স্মৃতিসৌধের মৌলিক অংশ হিসাবে গণ্য করা হয়।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফলক কয়টি

জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফলক হলো একটি অভিন্ন উপস্থান। এগুলি দেশের বিভিন্ন অংশে প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, ব্যক্তিত্ব, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি থেকে আদান-প্রদান করে এবং বিভিন্ন বিষয়বস্তু, চিত্র, ছবি, আইডিয়া ইত্যাদি যুক্ত করে স্মৃতিসৌধের সাথে। এই ফলকগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর সম্মান ও প্রকাশ প্রকাশিত হয়। এই ফলকগুলি স্মৃতিসৌধের কেন্দ্রীয় অংশ হিসাবে কাজ করে এবং স্মৃতিসৌধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফলকের সংখ্যা মোট ৩১ টি। এই ফলকগুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, ব্যক্তিত্ব এবং গণমাধ্যমের অংশগ্রহণে তৈরি হয়েছে। এই ফলকগুলি স্মৃতিসৌধের সাথে যুক্ত করে তার ঐতিহাসিক মূল্য বৃদ্ধি করে এবং বিপ্লবী শহীদদের স্মরণে আরও উচ্চ ধারাবাহিকতা যোগ করে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত

জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। এটি সাভারে অবস্থিত। এর নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কি. মি. দূরে সাভার থানার নবীনগরে  জাতীয় স্মৃতিসৌধ অবস্থিত। এ স্থানটি নির্বাচনের অন্যতম কারণ ছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে অনেক গণকবর আবিস্কৃত হয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। অধিগ্রহণকৃত ৮৪ একর জমির মাঝে প্রায় ৬৪ একর জুড়ে রয়েছে সবুজ ভূমি। ৪০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে স্মৃতিসৌধ। 

১৯৭২ সালের ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮২ সালের আগষ্ট মাসে সৌধের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোর নকশা তৈরি করেন স্থপতি মইনুল হোসেন। কংক্রিট নির্মিত ৭ টি ত্রিভূজাকৃতির স্তম্ভ দিয়ে মূল সৌধ গঠিত, যা ছোট হতে ধীরে ধীরে উচু হয়ে উপরে উঠে গেছে। এর উচ্চতা ১৫০ ফুট। প্রথম স্তম্ভটির উচ্চতা কম হলে ও প্রস্থে সবচেয়ে বড়। এটিকে আন্দোলনের সূচনা  অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে বোঝানো হয়েছে। পরবর্তী স্তম্ভগুলো দ্বারা যথাক্রমে ১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ কে বুঝানো হয়েছে। সর্বোচ্চ স্তম্ভটির দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে বুঝানো হয়েছে। এই স্মৃতিসৌধের বৈশিষ্ট্য হলো এক এক দিক থেকে এক এক রকম আকৃতির মনে হয়। এটি শুধু স্মৃতিসৌধ নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স।

১৯৭১'র ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। একই বছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়। এই স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। স্মৃতিস্তম্ভ এবং এর প্রাঙ্গণের আয়তন ৩৪ হেক্টর (৮৪ একর)। এ ছাড়াও রয়েছে একে পরিবেষ্টনকারী আরও ১০ হেক্টর (২৪ একর) এলাকা নিয়ে বৃক্ষরাজি পরিপূর্ণ একটি সবুজ বলয়। এই স্মৃতিসৌধ সকল দেশ প্রেমিক নাগরিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় ও সাফল্যের যুগলবন্দি রচনা করেছে। সাতটি ত্রিভুজাকৃতি মিনারের শিখর দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায়ের প্রতিটি এক ভাবব্যঞ্জনাতে প্রবাহিত হচ্ছে। এই সাতটি পর্যায়ের প্রথমটি সূচিত হয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। 

পরবর্তীতে চুয়ান্ন, ছাপ্পান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। মিনারটি ৪৫ মিটার (১৫০.০০ ফুট)উঁচু এবং জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং বাগান। স্মৃতিসৌধ চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহীদের দশটি গণসমাধি। 

স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের সর্বমোট আয়তন ৮৪ একর। স্মৃতিস্তম্ভ পরিবেষ্টন করে রয়েছে ২৪ একর এলাকাব্যাপী বৃক্ষরাজিশোভিত একটি সবুজ বলয়। স্মৃতিসৌধটির উচ্চতা ১৫০ ফুট। সৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল নিয়ে গঠিত। দেয়ালগুলো ছোট থেকে ক্রমশ বড়ক্রমে সাজানো হয়েছে। এই সাত জোড়া দেয়াল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ধারাবাহিক পর্যায়কে নির্দেশ করে। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ - এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের উচ্চতা কত ফুট

জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঢাকার অশোক রোডে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মুখ্য স্মৃতিস্থল। এটি একটি শুভ্র মার্বেল স্তূপ যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিপ্লবী শহীদদের স্মরণে নির্মিত। এটি জাতীয় স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের অংশ হিসাবে পরিচিত। এই স্মৃতিসৌধের মোট উচ্চতা প্রায় 150 ফুট (প্রায় 46 মিটার)। এটি দেশের গর্ববোধ ও ঐতিহাসিক মূল্য প্রতিফলিত করে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন কে

১৯৭২ এর ১৬ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা বা পর্যায় হিসেবে সাতটি ঘটনাকে বিবেচনা করে সৌধটি নির্মিত হওয়া এই জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসেন মুহাম্মাদ এরশাদ । স্মৃতিসৌধের উদ্বোধনের  দিন একটি ঐতিহাসিক উপলক্ষ্য হয়ে উঠে, যেখানে বিশেষ অতিথিদের উপস্থিতিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই উপলক্ষ্যে অন্যান্য গৌরবময় ব্যক্তিত্বরা ও রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অতিথিদের সাথে প্রদর্শনী, সংগীত, ও অন্যান্য উপলক্ষ্যের আয়োজন করা হয়।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url