ভূগোল কাকে বলে | ভূগোলের জনক কে

প্রিয় পাঠক আজকের এই টিউটোরিয়ালের ভূগোল কি ভূগোল কত প্রকার এবং ভূগোল সম্পর্কে সকল বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আপনি যদি ভূগোল সম্পর্কে সকল খুটিনাটি বিষয় জানতে চান তাহলে এই টিউটোরিয়ালের টি আপনার জন্য।

ভূগোল কি

ভূগোল বা Geography যেটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পৃথিবী সম্পর্কে বর্ণনা ও আলোচনা। ভূগোলে মানুষের বসবাসের জগৎ ও তার সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়ে থাকে। যেমন ভৌত ভূগোলে জলবায়ু, ভূমি ও জল নিয়ে গবেষণা করা হয়। আবার সাংস্কৃতিক ভূগোলে দেশ, বসতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহন, দালান, ও ভৌগোলিক পরিবেশের অন্যান্য পরিবর্তিত রূপ আলোচনা করা হয়। এককথায় ভূগোল হচ্ছে বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে পৃথিবীর ভূমির গঠন বিন্যাস, এবং পৃথিবীর অধিবাসী সম্পর্কিত সকল ক্রিয়া প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচিত হয়।

ভূগোল এর প্রধান কাজ কি?

ভূগোলের ইতিহাস হাজার বছরের পুরানো৷ ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের সঠিক, সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য গ্রিক যুগের পণ্ডিতগণ পৃথিবী সম্পর্কিত তথ্যাবলী সংগ্রহ করেন। ধারণা করা হয় মানব সভ্যতার আদিকাল থেকেই মানুষ যখন বুঝতে পেরেছে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় খাদ্য সম্পদ বিভিন্ন স্থানে ছড়ানো, সেই থেকেই মানুষের নিকট স্থানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। তাই মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে যে মিল আছে তার কার্যকরন উদযাটন করাই হচ্ছে ভূগোল এর প্রধান কাজ।

ভূগোল কত প্রকার ও কি কি

ভূগোলের ঐতিহাসিক গবেষণা পদ্ধতি হচ্ছে প্রকৃতি ও মানবজাতি সম্পর্কিত স্থানিক বিশ্লেষণ, স্থান ও অঞ্চল সম্পর্কিত এলাকা পঠন, মানব ভুমি সম্পর্ক পঠন এবং ভূবিজ্ঞান। ভূগোল প্রধানত দুই প্রকার। যথা প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানবীয় ভূগোল। ভূগোলের এই দুটি প্রধান শাখায় আরো কিছু অতিরিক্ত শাখা রয়েছে যেমন আঞ্চলিক ভূগোল, আধুনিক ভূগোল, ভারতীয় ভূগোল, প্রাচীন ভূগোল সামাজিক ভূগোল, এবং সমন্বিত ভূগোল যা পরিবেশগত ভূগোল নামেও পরিচিত

প্রাকৃতিক ভূগোল কাকে বলে

প্রাকৃতিক ভূগোল যা ভূমিবিদ্যা নামেও পরিচিত প্রাকৃতিক ভূগোল হচ্ছে ভূগোলের প্রধান দুটি শাখার একটি। প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল অংশগুলো, যেমন বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জীবমণ্ডল, ভূমণ্ডলের গঠন এবং সৌরজগৎ, পৃথিবীর উৎপত্তি, ভূত্বকের গঠন কাঠামো ও স্তরবিন্যাস, ভূমিরূপ বিজ্ঞান, জলবায়ু বিজ্ঞান, সমুদ্র বিজ্ঞান, উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রভৃতি প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে।

মানবিক ভূগোল কাকে বলে

ভূগোলের প্রধান দুটি শাখার অন্যটি হচ্ছে মানবিক ভূগোল বা মানবীয় ভূগোল। মানবিক ভূগোল হচ্ছে ভূগোলের এমন একটি শাখা যা পৃথিবীতে বসবাসকারী অভিবাসীদের বসবাসের স্থান এবং সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা। মানব ভূগোল ব্যবহারের একটি শাস্ত্রীয় ঘটনা হচ্ছে ১৮৪৪ সালের লন্ডন মহামারীতে কলেরায় আক্রান্ত গোষ্ঠী।

ভূগোলের জনক কে

ভূগোলের জনক হচ্ছেন কার্ল রিটার। অনেকে তাকে আরাম কেদারার ভূগোলবিদ বলে সম্বোধন করে থাকেন। কার্ল রিটার ১৭৭৯ সালের ৭ আগস্ট তৎকালীন প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের কুইডলিনবার্গে জন্ম গ্রহণ করেন। কার্ল রিটার ১৮২৫ সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক হিসাবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন। কার্ল রিটার ১৮২৫ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

প্রাচীন ভূগোলের জনক কে

পৃথিবীর বর্ণনা অর্থে সর্বপ্রথম এ Geography শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত এরাটোসথেনিস বা ইরাথোস থেনিস এরাটোস্থেনিস ছিলেন একজন গ্রিক গণিতজ্ঞ, ভূগোলবিদ, কবি, জ্যোতির্বিদ, এবং সঙ্গীত তত্ত্ববিদ। তিনি ছিলেন জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তি, যিনি আলেকজেন্দিয়া লাইব্রেরী-তে কেবলমাত্র জ্ঞানার্জনের জন্য কর্মরত ছিলেন।

ভারতীয় ভূগোলের জনক কে 

ভারতীয় ভূগোলের জনক হচ্ছেন শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও ভূগোল বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন পরবর্তীতে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে চলে যান সেখান থেকে ঠমফিরে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদান করেন এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভাগে ভূগোল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেন। এবং ১৯৩৯ এবং ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রিকোর্সে ভূগোল বিভাগের সূচনা করেন। শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করে।

ভূগোলবিদ এর কাজ কি

ভূগোলবিদ এর কাজ হচ্ছে ভূ-বিজ্ঞান থেকে শুরু করে জলবায়ু তত্ত্ব, সমুদ্র তত্ত্ব, উদ্ভিদ-ভূগোল তত্ত্ব, বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বাস্তুসংস্থান বিদ্যা, দুর্যোগ মোকাবিলা, নগর পরিকল্পনা, গ্রামীণ পরিকল্পনা ইত্যাদি নানা বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকেন। ভূগোলবিদরা পৃথিবী এবং এর জমি, বৈশিষ্ট্য এবং বাসিন্দাদের বন্টন অধ্যয়ন করেন । তারা একটি অঞ্চলের শারীরিক দিক এবং এর মধ্যে মানুষের ক্রিয়াকলাপগুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url